“জন্মগত হৃদরোগ: চিকিৎসা, পরামর্শ ও সচেতনতা
Information Hub

— জন্মগত হৃদরোগ (CHD) এর ধরন
জন্মগত হৃদরোগ (CHD) এমন একটি রোগ যা জন্মের সময় বা জীবনের প্রথম কিছু মাসে হৃদপিণ্ডের গঠনগত ত্রুটি থেকে ঘটে। CHD বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে প্রধান কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
ট্রান্সপোজিশন অফ দ্য গ্রেট ভেসেলস (TGV):
বর্ণনা: এতে শিরা ও ধমনী স্বাভাবিক অবস্থায় না থেকে একে অপরের সাথে পাল্টে যায়, যার ফলে রক্তের সঠিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট (ASD):
বর্ণনা: এটি হৃদপিণ্ডের দুইটি এট্রিয়া (উপরের চেম্বার) এর মধ্যে ছিদ্র থাকে, যা রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট (VSD):
বর্ণনা: এটি দুইটি ভেন্ট্রিকুলার (নিচের চেম্বার) মধ্যে ছিদ্র থাকে, যা রক্তের প্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি করে।
টেট্রালজি অফ ফ্যালট (TOF):
বর্ণনা: এটি একটি জটিল ধরনের জন্মগত হৃদরোগ, যার মধ্যে চারটি ত্রুটি থাকে – ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট (VSD), পলমোনারি স্টেনোসিস, অ্যোরটিক অনুপ্রবেশ, এবং সেকেন্ডারি রাইট ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি।
অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস:
বর্ণনা: অ্যাওর্টিক ভাল্ব সঙ্কুচিত হওয়ায় রক্তের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
প্যাটেন্ট ড্যাকটাস আর্কিউস (PDA):
বর্ণনা: এটি একটি ত্রুটি যেখানে জন্মের পরেও ধমনী ও শিরা একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা রক্তের প্রবাহে সমস্যা তৈরি করে।
ট্রাইকাসপিড এপ্লেশিয়া:
বর্ণনা: এটি এমন একটি ত্রুটি যেখানে ট্রাইকাসপিড ভাল্ব (হৃদপিণ্ডের একটি অংশ) সঠিকভাবে কাজ করে না।
চিকিৎসা কোথায় করা যায়?
বাংলাদেশে জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা দেয়ার জন্য কিছু হাসপাতাল এবং চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। এগুলি প্রধান শহরগুলোতে অবস্থিত, যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ইত্যাদি।
১. ঢাকা:
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (NICVD):
অবস্থান: শেরে বাংলা নগর, ঢাকা
সেবা: পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইসিজি, হার্ট ক্যাথেটারাইজেশন
যোগাযোগ: +880-2-9122560
এ্যাপোলো হাসপাতাল (এখন এভারকেয়ার):
অবস্থান: বারিধারা, ঢাকা
সেবা: পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি, এনজিওগ্রাম, পেসমেকার প্রতিস্থাপন
যোগাযোগ: +880-2-55037242
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট:
অবস্থান: শাহবাগ, ঢাকা
সেবা: হার্ট সার্জারি, শিশুর হার্ট ডায়াগনোসিস
যোগাযোগ: +880-2-9661551
২. চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল:
অবস্থান: আগ্রাবাদ
সেবা: শিশুদের হৃদরোগ চিকিৎসা, ইকোকার্ডিওগ্রাম
যোগাযোগ: +880-31-2511481
৩. সিলেট:
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল:
অবস্থান: সিলেট
সেবা: সাধারণ কার্ডিয়াক চিকিৎসা
যোগাযোগ: +880-821-713667
৪. রাজশাহী:
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল:
অবস্থান: রাজশাহী
সেবা: শিশু কার্ডিয়াক চিকিৎসা
যোগাযোগ: +880-721-774041
চিকিৎসার খরচ
জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা খুবই খরচসাপেক্ষ হতে পারে এবং এই খরচ রোগের ধরন, চিকিৎসার পরিমাণ, এবং হাসপাতালের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত:
হাসপাতাল খরচ (বাংলাদেশ): প্রায় ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫,০০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, যদিও বড় ধরনের সার্জারি বা জটিল চিকিৎসার খরচ আরো বেশি হতে পারে।
বিদেশী চিকিৎসা: ভারতে, সিঙ্গাপুরে, অথবা থাইল্যান্ডে চিকিৎসা করাতে প্রায় ৩,০০,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০,০০০ টাকার মধ্যে খরচ হতে পারে।
এছাড়া, চিকিৎসা ও সার্জারির সাথে মেডিকেল চেক-আপ, প্রয়োজনে পুনর্বাসন ও মেডিসিনের খরচও থাকতে পারে।
নোট: চিকিৎসা খরচ এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া প্রায়ই পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সঠিক তথ্য নেওয়া উচিত।

— জন্মের পর কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত?
জন্মগত হৃদরোগ (Congenital Heart Disease – CHD) শিশুদের মধ্যে জন্মের পরপরই বিভিন্ন লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ উল্লেখ করা হলো, যা দেখে আপনি ধারণা করতে পারেন যে আপনার সন্তান CHD তে আক্রান্ত হতে পারে: ১. শ্বাসকষ্ট:
শিশুটি শ্বাস নিতে সমস্যা অনুভব করলে।
নিঃশ্বাস নিতে গেলে কষ্ট হওয়া বা শ্বাসের গতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়া। ২. নীলাভ ত্বক ও ঠোঁট:
শিশুর ত্বক, ঠোঁট বা নখ নীলচে হয়ে গেলে।
এটি অক্সিজেনের ঘাটতি নির্দেশ করে। ৩. ওজন কম থাকা:
নবজাতকের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলে।
খাওয়ার পরও পর্যাপ্ত ওজন না বাড়লে। ৪. দুধ পান করতে সমস্যা:
শিশু দুধ পান করতে গিয়ে কষ্ট পাচ্ছে।
দুধ পান করার সময় বারবার শ্বাসকষ্টে ভুগছে। ৫. ঘামানো:
সামান্য পরিশ্রমেই অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
বিশেষ করে দুধ পান করার সময় বা খাওয়ার সময় ঘাম ঝরা। ৬. দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস:
শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া। ৭. বুকে ঝাঁকুনি অনুভব করা:
বুকে অস্বাভাবিক শব্দ বা কম্পন অনুভব করলে। ৮. ক্রমাগত ক্লান্তি:
শিশু সবসময় ক্লান্ত বা দুর্বল অনুভব করছে।
স্বাভাবিকের তুলনায় কম সাড়া দেওয়া। ৯. বারবার নিউমোনিয়া বা ফুসফুসে সংক্রমণ:
ঘন ঘন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।
শ্বাসকষ্ট ও কাশি বাড়তে থাকা। কী করবেন?
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা কার্ডিওলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রাথমিক অবস্থায় ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echo) বা ইসিজি (ECG) পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায়।
সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে CHD রোগীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। প্রতিটি হৃদয় মূল্যবান।

Benin | Cotonou
— জন্মগত হৃদরোগ (CHD) রোগীর জন্য পুষ্টিকর খাবারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর শরীরের বিশেষ কিছু চাহিদা থাকে, যার জন্য সঠিক পুষ্টি জরুরি। চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তৈরি করা উচিত। তবে সাধারণত কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার ও পুষ্টির উপাদান রয়েছে, যা শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সহায়ক হতে পারে:
১. প্রোটিন:
কেন জরুরি: হার্টের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
উৎস: মুরগি, মাছ, ডাল, ডিম, দই, দুধ, টোফু, এবং বাদাম।
২. ফল ও শাকসবজি:
কেন জরুরি: ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
উৎস: গাজর, পালং শাক, ব্রোকলি, আপেল, কলা, কমলা, এবং স্ট্রবেরি।
৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:
কেন জরুরি: হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
উৎস: মাখন, আলসুল, তেলাপিয়া মাছ, স্যামন মাছ, ওয়া-চিয়া বীজ, আখরোট।
৪. কার্বোহাইড্রেট:
কেন জরুরি: শক্তি সরবরাহ করে এবং শরীরের সুষ্ঠু কাজ নিশ্চিত করে।
উৎস: ব্রাউন রাইস, ওটমিল, পূর্ণ শস্যের রুটিও, আলু, মিষ্টি আলু।
৫. কম চর্বি ও লবণ:
কেন জরুরি: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
খাবারের মধ্যে: কম চর্বি মাখন, চর্বিমুক্ত দুধ, এবং লবণ কম পরিমাণে ব্যবহার করা।
৬. দ্রুত হজমযোগ্য খাবার:
কেন জরুরি: কিছু রোগী দ্রুত হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ করতে পারে যাতে তাদের শক্তি বজায় থাকে।
উৎস: স্যুপ, ফলের রস, বা সহজপাচ্য খাবার, যেমন চিঁড়ে বা মিষ্টি আলুর পিউরি।
৭. বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট:
কেন জরুরি: কিছু বিশেষ পুষ্টির চাহিদা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে হতে পারে। যেমন, ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম, এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট।
৮. পানি:
কেন জরুরি: শারীরিক প্রক্রিয়াগুলির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এটি দেহের সব অঙ্গের কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
৯. শুকনো খাবার থেকে বিরত থাকা:
কেন জরুরি: শুকনো খাবার ও প্রক্রিয়া করা খাবারে অতিরিক্ত লবণ, চিনি, এবং অসুস্থ চর্বি থাকে, যা হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এগুলি শুধুমাত্র সাধারণ পরামর্শ। যে কোনো ধরনের খাদ্য পরিবর্তন বা সাপ্লিমেন্ট নেয়ার আগে, চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
Donate
Support Us and Change the Course of a Child’s Life Today!
ছোট্ট শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য আপনার একটি ডোনেশনই যথেষ্ট।
একবার ভাবুন, আপনার দেওয়া একটিমাত্র সাহায্য যদি একটি নিষ্পাপ শিশুকে আবার মায়ের কোল ফিরে পেতে সাহায্য করে — তাতে কি ক্ষতি?
আপনার ছোট্ট সহায়তাই হতে পারে একটি জীবনের পুনর্জন্ম।
ডোনেট করতে ক্লিক করুন